abahs-banner-zolui
Previous slide
Next slide
জরুরি বিজ্ঞপ্তি: আগামী ১৮/০৭/২০২৪ তারিখে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য শিক্ষার্থীরা কমপক্ষে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে উপস্থিত থাকতে হবে - অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা-শিক্ষা মন্ত্রণালয় - আগামীকাল ১৭/০৭/২৪ইং বুধবার পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। - অগ্রসার বৌদ্ধ অনাথালয় উচ্চ বিদ্যালয় চলমান সংস্কার কাজের সংবাদ - ষষ্ঠ–নবমের ষাণ্মাসিক মূল্যায়নের সংশোধিত সূচি - আগামী ০১/১০/২৩ইং হতে ২০২৪ সালের এস এস সি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। পরীক্ষার সময়সূচি নোটিশ বোর্ডে পাওয়া যাবে। - সকল সম্মানিত অভিভাবকদের দৃষ্টি আর্কষণ করছি।

(২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৯ - ২ মার্চ, ১৯৯৪)
প্রতিষ্ঠাতা

বিশুদ্ধানন্দ মহাথের ছিলেন একজন বৌদ্ধ ধর্মীয় পণ্ডিত ও সমাজসেবী। তিনি বাংলাদেশ সরকার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠা কালীন ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত ছিলেন।[১] সমাজসেবায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০০৫ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।

প্রাথমিক জীবন

বিশুদ্ধানন্দ ১৯০৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ)।
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার হোয়ারাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কর্মধন বড়ুয়া এবং মাতার নাম চিন্তাবতী বড়ুয়া। তাঁর পিতার দেওয়া নাম ছিল শশাঙ্ক বড়ুয়া। স্থানীয় নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় এবং পরে মহামুনি এ্যাংলো পালি বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। ১৯২১ সালে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি ১৯২৫ সালে শ্রামণ্যধর্মে দীক্ষিত হলে তার নাম রাখা হয় বিশুদ্ধানন্দ। শ্রামণ্যধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তিনি বাংলা ভিক্ষু সংঘের প্রতিনিধি হিসেবে সর্বভারতীয় বৌদ্ধ সম্মেলনে যোগদান করেন এবং কলকাতায় অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগদানের মাধ্যমে তিনি যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সান্নিধ্য লাভ করেন।[২]
১৯৩০ সালে তাঁর গুরু সংঘনায়ক অগ্রসার মহাস্থবিরের কাছে উপসম্পদা গ্রহণ করেন। বৌদ্ধধর্মে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তিনি ১৯৩৪ সালে শ্রীলঙ্কায় যান এবং সেখানে বিদ্যালঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিন বছর পড়াশুনার পর ১৯৩৭ সালে তিনি সেখান থেকে ‘শ্রীসদ্ধর্মভাণক’ অভিধা অর্জন করেন।[৩]

সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড

শ্রীলঙ্কা থেকে পড়াশুনা করে দেশে ফিরে তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও শিক্ষামূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। তিনি দেশে শিক্ষা বিস্তারে কয়েকটি বিহার ও পালি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।[৩]
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষকালীন বিশুদ্ধানন্দ আর্তমানবতার সেবায় বেনীমাধব বড়ুয়া, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সহায়তায় ত্রাণ কমিটি গঠন করেন। পরে দরিদ্র বৌদ্ধদের কল্যাণে হোয়ারাপাড়া গ্রামের সুদর্শন বিহারে ‘অগ্রসার অনাথালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে অগ্রসার মহাবিদ্যালয় নামে পরিচিত।[৩] ১৯৪৪ সালে জনকল্যাণের জন্য ‘অগ্রসার স্মৃতি সমিতি’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে শিলক বৌদ্ধ সম্মেলনে ‘পূর্ব পাকিস্তান বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমান ‘বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ’ নামে পরিচিত। তিনি সংঘটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন।[২]

সম্মাননা

  • তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘তখমা এ পাকিস্তান’, ১৯৬৫।
  • আন্তর্জাতিক শান্তিপদক, ১৯৯০।
  • নরওয়ের অসলোস্থ গান্ধী শান্তি ফাউন্ডেশন কর্তৃক মহাত্মা গান্ধী পুরস্কার, ১৯৯৩।
  • সমাজসেবায় মরণোত্তর একুশে পদক, ২০০৫।[২]
যাঁর নামে অগ্রসার বৌদ্ধ অনাথালয় উচ্চ বিদ্যালয় নামে প্রতিষ্ঠিত সে “সংঘনায়ক সৌগতসূর্য অগ্রসার মহাথের”  বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বপ্রাচীন থেরোবাদী সংঘঠন বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসভার সর্বোচ্চ পদ  সংঘনায়ক পদে বরিত হন ।  এ মহান ভিক্ষু ব্যক্তিত্ব ৫ মে , ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে বৃহত্তর হোয়াড়াপাড়া গ্রামে  জন্মগ্রহণ করেন এবং ৮ অক্টোবর,১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে মহাপ্রয়াণ করেন । 
 
তিনি আধ্যাত্বিক গুণের অধিকারী ছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে । তিনি নাকি বছরে একবার স্নান  করতেন,তারপরও তাঁর শরীর হতে সুগন্ধি বের হতো , শরীর কখনো ময়লা হতো না ।  অবিভক্ত ভারতের  সারনাথ মূলগন্ধকুটি বিহারের দ্বারোৎঘাটন অনুষ্ঠানে বয়জ্যেষ্ঠ বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসাবে পৌরহিত্য করার দায়িত্ব  পান সংঘনায়ক সৌগতসূর্য অগ্রসার মহাথের । তিনি বাংলা ,ইংরেজি ,পালি , সংস্কৃত ও হিন্দি ভাষায়  সমপারদর্শী ছিলেন । এ আয়োজনে প্রকাশিত কার্যবিবরণী বৌদ্ধ ইতিহাসের এক প্রমাণ্য দলিল ।
 
প্রতিষ্ঠাতা মহামান্য মহাসংঘনায়ক শ্রীসদ্ধর্মভাণক বিশুদ্ধানন্দ মহাথের সম্পর্কে
 
মহামান্য মহাসংঘনায়ক শ্রীসদ্ধর্মভাণক বিশুদ্ধানন্দ মহাথের এক বিরল প্রতিভাদ্বীপ্ত মহান ভিক্ষু ব্যক্তিত্ব। তিনি পাক-ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষু ব্যক্তিত্ব । বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর অবদান  অনস্বীকার্য । স্বাধীনতাত্তোরকালে বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাঁর অনন্য সাধারণ ভূমিকা সকলের কাছে শ্রদ্ধার  সহিত স্মরণীয় । 
 
১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার এ বিরল প্রতিভাদ্বীপ্ত মহান ব্যক্তি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলাস্থ১০ নং পূর্বগুজরা ইউনিয়নের হোয়াড়াপাড়া গ্রামের এক কীর্তিমান বৌদ্ধ পরিবারে জন্মগ্রহণ  করেন । পিতা – কর্মধন বড়ুয়া আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক এবং মাতা –চিন্তাবতী বড়ুয়া একজন সদ্ধর্মপরায়ণা রমণী । পিতা মাতার সাত সন্তানের মধ্যে ষষ্ঠ সন্তান । নাম রাখা হয় শশাঙ্ক । ১৭ বছর বয়সে সংঘনায়ক  সৌগতসূর্য অগ্রসার মহাথের’র কাছে শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষিত হলে তাঁর নাম পরিবর্তন করে বিশুদ্ধানন্দ রাখা  হয় । মহামুণি এ্যাংলো পালি ইন্সটিটিউশনে তিনি মাধ্যমিক স্তরে পড়া-লেখা করেন । এসময় তিনি অনেক  পন্ডিত ব্যক্তির সংস্পর্শ লাভ করে তাঁদের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন ।১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ২১ বছর বয়সে তিনি  উপসস্মদা লাভ করেন । ১৯৩৪ – ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শ্রীলংকার বিদ্যালংকার ধর্মীয় বিষয়ে পড়া-লেখা  করেন । দেশে ফিরে এসে শুরু করেন বৌদ্ধ সমাজ উন্নয়নের কাজ । 
 
১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে গুরুদেব অগ্রসার মহাথের’র জন্ম-জয়ন্তী আয়োজন এক ঐতিহাসিক ঘটনা । প্রথিতযশা  বৌদ্ধব্যক্তিদের এ জয়ন্তী আয়োজনে সম্পৃক্ত করেন । এ অনুষ্ঠানে শতাধিক রাষ্ট্রনায়ক, সাংঘিক ব্যক্তিত্ব  ও সংঘঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন ও শুভেচ্ছা বাণী প্রদান করেন ।  অনুষ্ঠানের অন্যতম দিক হলো দশদিন ব্যাপী ভিক্ষু সংঘের পরিবাসব্রতনুষ্ঠান । মূল অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের  নিমিত্তে২১ টি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়ে তা সকলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হয় । 
 
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষোত্তর ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন অগ্রসার বৌদ্ধ অনাথালয় । এ অনাথালয়ের  মাধ্যমেহাজার হাজার অনাথ ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও ভরণ-পোষণ যোগাতে থাকেন তিনি । প্রতিষ্ঠা  করেন অগ্রসার মেমোরিয়াল সোসাইটি অব বাংলাদেশ । এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন অগ্রসার  বৌদ্ধ অনাথালয় উচ্চ বিদ্যালয়, অগ্রসার বালিকা মহাবিদ্যালয়, ছাপাখানা ও কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্র । ১৯৪৯  খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ প্রতিষ্ঠা করে তার মাধ্যমে বৌদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা  রাখতে সক্ষম হন তিনি। এ ছাড়া ঢাকা ধর্মরাজিক মহাবিহার ও অনাথালয়,চট্টগ্রামের নবপন্ডিত বিহার  প্রতিষ্ঠাসহ সমগ্র বৌদ্ধ সমাজের সমস্যা নিরসন,উন্নয়ন ইত্যাদি কর্ম বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের  মাধ্যমেই তিনি সম্পাদন করেন ।
 
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীনতার স্বপক্ষে মহাথের’র ভূমিকা ছিলো জোরালো। ১২০০০ মাইল ঘুরে  বৌদ্ধজনগণের পাশাপাশি হিন্দু,মুসলিম,খ্রিস্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের মা-বোনের ইজ্জত রক্ষা ও জান- মাল রক্ষা করেন । তাঁর এ কর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক বৌদ্ধ পরিবার মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিতে ও  অনেক বৌদ্ধ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে কুন্ঠিত হননি । স্বাধীনতাত্তোরকালে বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরই বাংলাদেশী বৌদ্ধদের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র নাম । যিনি মহাথের নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন ।  বাংলার ইতিহাসে অতীশ দীপংকরের পর মহাথেরই একমাত্র নাম,যিনি দল,মত, সম্প্রদায় , জাতি ,ধর্ম  নির্বিশেষে সকলের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতেন এবং বিশ্ব দরবারে পরিচিত বৌদ্ধ ভিক্ষু ব্যক্তিত্ব । তাই 
তাঁকে বাংলার নব অতীশ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয় । 
 
১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ২ মার্চ ৮৬ বছর বয়সে এ মহাপ্রাণ মহাপ্রয়াণ করেন । সমগ্র বাংলাদেশ তথা বৌদ্ধ বিশ্ব  তাঁর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করে । গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় শোক  প্রস্তাব । ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে ৫ লক্ষ লোকের সমাগমের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী প্রতিনিধিবৃন্দের  উপস্থিতিতে জন্ম জনপদ পূর্বগুজরা হোয়াড়াপাড়া গ্রামেই তাঁর অন্ত্যেষ্টি অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন হয় ।

তথ্যসূত্র

  1.  “সম্মানিত ভাইস চেয়ারম্যানবৃন্দের তালিকা”। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সংগ্রহের তারিখ , ২০১৭। 
  2. ↑ ঝাঁপ দিন:   আহমদ, নেছার (১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭)। “স্মরণের আবরণে বিশুদ্ধানন্দ মহাথের”। এবিনিউজ। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে, ২০১৭।
  3. ↑ ঝাঁপ দিন:   বড়ুয়া, সুকোমল। “বিশুদ্ধানন্দ মহাথের”। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে, ২০১৭। 

Facebook Comments